Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ক্ষতি সিটি কর্পোরেশন পূরন করতে বাধ্য! - ফয়সাল ফারনিম


 

ময়মনসিংহ: বুধবার (১৪ মে, ২০২৫) সকালে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং বাজার এলাকায় হঠাৎ করেই নেমে আসে বিশাল এক ধ্বংসযজ্ঞ। রেলওয়ের জমিতে গড়ে ওঠা শত শত দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে। রেল কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনী, পুলিশ রেলওয়ে পুলিশের সমন্বয়ে পরিচালিত এই উদ্দেদ অভিযান মুহূর্তেই বদলে দেয় হাজারো মানুষের জীবন। রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা উপসচিব নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে বুলডোজারের নিচে চাপা পড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন, পুঁজি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা।

উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের কান্নার রোল আর আর্তনাদ মিশে যায় ধুলোর সাথে। তাদের অভিযোগ বছরের পর বদর সিটি করপোরেশন থেকে লিজ নিয়ে, নিয়মিত খাজনা দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন তারা। কিন্তু কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ বা বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই তাদের সর্বস্বান্ত করে দেওয়া হয়েছে। মালামাল সরানোর সুযোগটুকুও মেলেনি। মামুন মিয়া নামে একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী বলেন, "লিজের টাকা দিয়ে ব্যবসা করেছি, এখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেল। ডিম বিক্রেতা মাহবুবুর রহমানের আকৃতি, "আমাদের কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও দেওয়া হয়নি।" তাদের প্রশ্ন বৈধভার কাগজপত্র থাকার পরও কেন তাদের পথে বসতে হলো? সিটি কর্পোরেশনের লিজের বৈধতা নিয়েই যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন তাদের ক্ষতির দায়ভার কে নেবে?

অন্যদিকে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই অভিযানকে ন্যায্য বলে দাবি করছে। রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া দামে লিজ দিয়ে আসছিল। এই অভিযান সেইসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এবং সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের অংশ। তার মতে, সিটি কর্পোরেশন থেকে লিজ নিলেও রেলের জায়গা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতন থাকা উচিত ছিল। রেল মন্ত্রণালয় নির্দেশিত এই অভিযান দেশজুড়ে চলবে বলেও তিনি জানান। উচ্ছেদের পর এই জায়গাটি খালি করে যাচাই-বাছাইয়ের পর ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নগরীর সচেতন মহল অবশ্য এই উদ্দেদকে স্বাগত জানিয়েছেন। ভাদের মতে, এই জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দখলে ছিল, যারা চাঁদাবাজি করত এবং রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটত। তারা চান এই উচ্ছেদ স্থায়ী হোক।

তবে এই উচ্ছেদ অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তাদের শঙ্কা, প্রশাসনের তদারকির অভাবে এবং দুর্নীতির প্রভাবে হয়তো কিছুদিন পর আবারও এই জায়গায় দোকানপাট বসে যাবে, যা পুরো অভিযানকে প্রহসনে পরিণত করবে। তাদের মতে, যদি নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েই থাকে, তাহলে ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়া উচিত ছিল।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা ফয়সাল ফারনিমের ভূমিকাও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছেদ বন্ধের চেষ্টা করেন এবং সাময়িকভাবে সফলও হন। কিছু পরদিন একাত্তর টিভিতে ভার একটি ভিন্ন চিত্র উঠে আসে, যেখানে তাকে অভিযানের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়। পরে ফয়সাল ফারনিম স্পষ্ট করেন যে তিনি নীতিগতভাবে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে, তবে তিনি চান যে কোনো উদ্দেদের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তভ এক মাস আগে একাধিক মাধ্যমে অবহিভ করা হোক। আর সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন এই উচ্ছেদে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা সিটি কর্পোরেশন পূরন করতে বাধ্যা তার এই বক্তব্য সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা এবং ঋতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের আশা জেগেছে।

সব মিলিয়ে ময়মনসিংহের এই উদ্দেদ অভিযান রেলের জমি পুনরুদ্ধার এবং অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙার সরকারি পদক্ষেপ হলেও, এটি শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জীবনে এনে দিয়েছে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা। স্কতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো আপাতত উত্তরহীনই রয়ে গেছে।

Post a Comment

0 Comments