চরকা রিপোর্ট ঃ
ময়মনসিংহ হরিকিশোর রায় রোডের প্রায় দুই শত বছরের পূরানো বাড়ি ভাঙ্গা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে । বাড়িটি ভেঙ্গে শিশু একাডেমির নিজস্ব ভবন করার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে তবে এর আগেও এ বাড়িতে শিশু একাডেমির অফিস ছিল । বাড়িটি অকেজো হওয়ায় অন্যস্থানে ভাড়া নিয়ে শিশু একাডেমির অফিস কাযক্রম চলছিল তবে শত বছরের পূরোণো বাড়িটি কোন দিক নির্দেশনা না নিয়ে কিভাবে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মেহেদী জামান এরকম সিদ্ধান্ত নিলেন জবাবে কোন উত্তর মিলছে না তার বক্তব্য নিজ জমি থাকা সত্ত্বেও প্রতিমাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয় । তাই বাড়ি করার পরিকল্পনা নেয় সরকার।
ছাড়াকার এব সুজনের সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ জানান হরিকিশোর রায় রোডের এই বাড়িটি নিয়ে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অনেকেই ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এই বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষের বলে ভুল তথ্য প্রচার করছেন। প্রকৃতপক্ষে এই বাড়ির সাথে সত্যজিৎ পরিবারের কোনই সম্পর্ক নেই। তবে বাড়ির সামনে যে সড়ক "হরিকিশোর রায় রোড" তা আবার সত্যজিৎ রায়ের প্রপিতামহের নামে। ছবির এই বাড়িটি শশীকান্ত মহারাজ তার বাংলো বাড়ি "শশীলজের" পাশেই নির্মাণ করেন তাঁর কর্মচারীদের জন্য। যতদূর জানা যায় এখানে জমিদারের এক পদস্থ কর্মচারী থাকতেন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত দানবীর ও সমাজ সেবক রণদা প্রসাদ সাহা ইংরেজদের কাছ থেকে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউজ কিনে নেন। যেটাকে আমরা বাতির কল বলি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনে নেয়ার পর তাঁর নিযুক্ত ম্যানেজারের বাস ভবন হিসেবে ব্যবহারের জন্য তিনি শশীকান্ত মহারাজের কাছ থেকে বাড়িটি লিজ নেন। এই বাড়িতে রণদা প্রসাদের ম্যানেজর থাকতেন। এরপর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর এটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সরকার এই বাড়িটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জন্য বরাদ্দ দেয়। দীর্ঘদিন এই বাড়িটি জেলা শিশু একাডেমির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই বাড়ি এক সময় ব্যবহারের অনুপযোগী এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটিকে সরকার পরিত্যক্ত ভবন হিসেবে ঘোষণা দেয় প্রায় এক যুগেরও আগে। এখানে নতুন করে একটি ভবন নির্মাণের জন্য অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়। কয়েকবার এই ভবন ভেঙে শিশু একাডেমির ভবন নির্মাণ করতে গেলে কি কি কারণে যেন এটা বারবার থেমে যায়। সম্প্রতি এই পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলে একেকজন একেক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে।
গবেষক স্বপন ধর বলেন, বাড়িটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দানবীর রায় বাহাদুর রনদা প্রসাদ সাহার অস্থায়ী বাসভবন। ২০১৬-১৭ সালে জার্মান সরকারের প্রকল্পের আওতায় গবেষণা ও প্রদর্শনী হয়। ময়মনসিংহের নগর ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রকল্পে ফ্রান্সের প্রত্নতত্ত্ববিদ রুমেন লার্চার সঙ্গে তিনিও কাজ করেন। গবেষণায় ৩২০টি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়। তখন তিন ক্যাটাগরিতে ভবনগুলো ভাগ করা হয়েছিল। যে বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে, সেটি ছিল দ্বিতীয় ক্যাটাগরির বাড়ি। প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এই বাড়ি ভাঙার অধিকার কারও নেই, উচিতও হয়নি।
স্বপন ধর বলেন, ‘বাড়িটি ছিল রনদা প্রসাদের অস্থায়ী বাসভবন। এর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের কাছে সব ধরনের গবেষণা কাগজ রয়েছে। যে কথাটি বলা হচ্ছে, এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি, সেটি হচ্ছে দুর্লভ ভবন। সেই বাড়িটি এখান থেকে কিছুটা দূরে। এই রোডটি সত্যজিৎ রায়ের পরিবার হরিকিশোরের নামে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মেহেদী জামান আপতত বাড়ি ভাঙ্গা কাজ বন্ধ রয়েছে ।
জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম জানান সরকারি খতিয়ান সি আর আর এস যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে বাড়িটি সত্যজিৎ রায় বা পূর্বের পুরুষের নয় । মিথ্য দেওয়া হয়েছে জায়গাটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন ২০০৮ সালে শিশু একাডেমির নামে বরাদ্ধ করা ।
0 Comments