প্রতিদিন চরকা

প্রতিদিন চরকা

টিটোর দেহ কুকুরে খেয়েছিল নাকি মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল? -ইমতিয়াজ আহমেদ

 


সামরিক জান্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি।  এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে অপসারণ করে সংবিধান স্থগিত করেন।  পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন এবং আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ১০টি, সিপিবি ০৫টি, ঐক্য ন্যাপ ০৫টি, জাসদ (রব) ০৪টি, মুসলিম লীগ ০৪টি,  জাসদ (সিরাজ) ০৩টি, বাকশাল ০৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ০৩টি, ন্যাপ (মুজাফফর) ০২টি আসনে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২টি আসনে জয়লাভ করে। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে। পরবর্তিতে একই বছরের ১৫ অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এরশাদ অবধারিতভাবে জয়লাভ করে পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। নিজের ক্ষমতা পাঁকাপোক্ত করেন।

১৯৮৭ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১০ নভেম্বর ঢাকা অবরোধের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। সারাদেশে থমথমে পরিস্থিতি। সারাদেশে লেলিয়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টির অস্ত্রধারীদের। চলে গণগ্রেফতার। থানা পর্যায় পর্যন্ত গণগ্রেফতারের খড়গ নেমে আসে। এরশাদ সরকার অলিখিত নির্দেশনায় যানবাহন বন্ধ করে দেয়। যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মিরা ঢাকায় যেতে না পারেন। 

এমন থমথমে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৈয়দ আমিনুল হুদা টিটোর মত লড়াকুদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। টিটো কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুরে বসবাস করতেন। থমথমে পরিস্থিতির মাঝেও তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকায় গিয়ে অবরোধ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আর বাড়ী ফিরেননি। টিটোর হদিস পায়নি তার পরিবার। ঢাকা অবরোধে গিয়ে তরুন টিটো হারিয়ে গেলেন। টিটো এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার কোন তথ্য আর প্রকাশিত হয়নি। তার মৃতদেহ কুকুর খেয়েছে নাকি মাটি চাপা দেয়া হয়েছে তার কোন তথ্যও নেই। একজন টগবগে তরুন কোন তথ্য ছাড়াই পৃথিবীর বুকে হারিয়ে গেলেন। 

সমাজ বদলের প্রত্যাশায় টিটো সিপিবি'র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে সিপিবি ১০ নভেম্বরে শহীদ টিটো দিবস পালন করে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বরের পর সিপিবি তার দলীয় একনিষ্ঠ কর্মি টিটোর খোঁজে যথাযথ ধারাবাহিক তৎপরতা চালিয়েছিল কি? তা আমাদের জানা নেই। কোন তথ্য না থাকায় আমাদের মনে তাই প্রশ্ন জাগে, টিটোর দেহ কুকুরে খেয়েছিল নাকি মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল? আজ ৩৮ বছর পরেও এই প্রশ্ন আমাদের মনে উদ্রেক হয়। এই প্রশ্নের উত্তর দিবে কে? 

লেখক পরিচিতি: সভাপতি, সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ, ময়মনসিংহ।

Post a Comment

0 Comments