মাসুম :
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের অম্বিকাগঞ্জ বাজারে অবস্থিত এমপিওভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "অম্বিকাগঞ্জ মহাবিদ্যালয়" এখন চরম সংকটে। চরাঞ্চলের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে এটি এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির কবলে পড়ে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।এ নিয়ে সাবেক রেক্টর এর বিরুদ্ধে কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রী অভিবাবক এবং শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক আজীবন রেক্টর এবং কথিত দাতা সদস্য প্রকৌশলী রাজিবুল আলম বিপ্লবের বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থ তছরুপ, অবৈধ পদ সৃষ্টি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ সূত্র জানায়, শিক্ষা আইনে ‘রেক্টর নামে কোনো পদ না থাকা সত্ত্বেও বিপ্লব নিজেই এই পদ তৈরি করে মাসিক ২২,০০০ টাকা সম্মানী ও মোবাইল বিল গ্রহণ করতেন। তাছাড়া, কলেজের জমি ও পুকুরের লিজ, দোকান ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ কলেজ ফান্ডে না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সভা আয়োজন করে বিপ্লব লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন, যা কলেজ তহবিল থেকেই পরিশোধ করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এসব কার্যকলাপে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠানের ‘সর্বেসর্বা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিপ্লব তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন পদে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তার স্ত্রী নাজমুন নাহার কম্পিউটার সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকা সত্ত্বেও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে বহাল আছেন। তার ভগ্নিপতি ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে আছেন। একইভাবে, বিপ্লব তার ঘনিষ্ঠজন নাছিমা খাতুনকে অর্থের বিনিময়ে আয়া পদে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া মাহমুদুল হাসান নামে এক প্রার্থীর কাছ থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপ্লব ১ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে 'রেক্টর' পদটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং বিপ্লবের সম্মানী বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানবিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। কলেজ শিক্ষকরা জানান, বিপ্লব তার নিজ বাসভবনে কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করে প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন জানান, বিপ্লব এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছেন। তার স্ত্রী কার্যত কোনো কাজ না করেও বেতন নিচ্ছেন, যা চরম অনিয়ম। বিপ্লব শিক্ষকদের হুমকি ধামকি দিয়ে কলেজে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন।”এমন পরিস্থিতিতে কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকরা একযোগে মানববন্ধন করে বিপ্লবের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন কারও পারিবারিক সম্পত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি উঠেছে।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরো জানান, এই বিষয়গুলো আসন্ন এডহক কমিটির সভায় উত্থাপন করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ম-নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়াই জরুরি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং একক আধিপত্য কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।”
0 Comments