শফিয়েল আলম
অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ পদে যেন আসীন থাকনে এমন টাই দাবি করেছেন অত্র কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রছাত্রীরা জানান স্যার কে অপসারণ করার জন্য গুটিকয়েক ছাত্রছাত্রী আন্দোলন করেছে যা লজ্জ্বা ও হতাসার । স্যার এমন একজন ব্যাক্তি যার মুখে সবসময় হাসি থাকেন ছাত্রছাত্রীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং পরিশেষে সমাধান করেন। স্যার গত পাঁচ বছরে তাঁর অবদান ছাত্রছাত্রীরা কখনো ভুলবে না। যদি এমন টা হয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা স্যারের পক্ষে আন্দোলন করবে।
অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন গত ৯ আগস্ট ২০২১ সালে । কভিড ১৯ করোনা ভাইরাস মহামারীর পর কলেজ কে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার চাদরে ঢেকে একটি সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাশে ফেরান। হোস্টেলের থাকার উপযোগী সহ ছাত্রছাত্রী দের পাশে থেকে একজন দক্ষ অভিবাবকের দায়িত্ব পালন করেন। কলেজ কে সু শিক্ষা পাঠদানের পাশাপশি ছাত্র রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী কে ক্লাশে মনোযগী হওয়ার বিশেষ পরামর্শ দেন । এমন কি ক্লাশ চলাকালীন সময়ের মাজে পর্যবেক্ষনের কাজটি করেন বলে ছাত্রছাত্রীরা জানান । এ ছাড়া নিয়মশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকান্ডে তার ওপর কলেজে প্রশাসনের ছিল গভীর আস্থা ও নির্ভরতা। ইতমধ্যে আনন্দ মোহন কলেজে ফিনান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করে তিনি ছাত্রছাত্রীদের মনি কোঠায় ঠাই নিয়েছেন। অধ্যক্ষ আমান উল্লাহর সৃজনশীল কাজগুলোর মাধ্যমে কলেজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে এটি শিক্ষার্থীদের মাজে দৃষ্যমান ।
অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ আনন্দ মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন ১৯৬৮ সালের ২ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মো. আমান উল্লাহ। তিনি ছাত্র জীবনে ফুলবাড়িয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি ও আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫-৮৬ সেশনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও ১৯৯১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ১৪তম বিসিএসের মাধ্যমে তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন।
অধ্যাপক আমান উল্লাহর প্রথম কর্মস্থল ছিল আনন্দ মোহন কলেজ। তার ৩২ বছর চাকরি জীবনের ২৯ বছরই আনন্দ মোহন কলেজে কেটেছে। এ ছাড়া তিনি শেরপুর সরকারি কলেজ, মুক্তাগাছার শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ, কুমিল্লার দেবিদ্বার সুজাত আলী সরকারি কলেজ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেই অধ্যাপক আমান উল্লাহ করোনাকালীন শেষ সময়ে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনাটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল। তা মোকাবিলা করার জন্য কলেজ ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করা হয়। সৌন্দর্য বর্ধনে বাগান করা হয়। বিভিন্ন হোস্টেল শিক্ষার্থীদের থাকার উপযোগী করা এবং বিভাগগুলো উন্নয়ন করা হয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করে লাল দালান রিপেয়ার করা ও রং করা হয় যা দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। ১০ তলা একাডেমিক বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নানা কারণে। সেটিকে নানা দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে পুনরায় তা অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় যা প্রায় শেষের পথে। তাতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম সংকট অনেক টাই হ্রাস পাবে । শিক্ষার্থীদের জন্য দুই টি হোষ্টেল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে যাতে প্রতিনয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে শিক্ষার্থীদের থাকার সংকট কমে যাবে। শিক্ষকদের জন্য দুইটি ডরমিটরি নির্মাণ হচ্ছে যাতে শিক্ষকরা ব্যাপক উপকৃত হবেন। কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষক পরিষদের মিটিং রুম সংস্কার, ২০ টি বিভাগের ২০ টি ক্লাস রুম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা,বিতর্ক, নবীনবরণ, সমাপনী অনুষ্ঠান,বসন্ত বরণ,বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, সেমিনার ও অন্যান্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে করা হয় যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। আনন্দ মোহন ক্যাম্পাস কে আনন্দময় ক্যাম্পাসে রুপান্তরিত করা হয়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি নির্মাণাধীন থাকায় বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করা হয়। হোষ্টেলে পাঠকক্ষ তৈরি করে দেয়া হয়। এছাড়াও অডিটোরিয়াম ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি নির্মাণ করার জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে দ্রæত কাজ করানো হচ্ছে। পুকুরের চারপাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে তাতে ওয়াকিং পাথ নির্মাণ কাজ পাইপ লাইনে রয়েছে। যাতে শিক্ষক / শিক্ষার্থীরা একটি নান্দনিক পরিবেশ পাবে। ফ্লাগস্ট্যান্ড উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। প্রতিবছর এইচএসসি পাশ করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল, বুয়েট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে। প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষায় ভাল সংখ্যক শিক্ষার্থী চান্স পাচ্ছে। সিইডিপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় আঠারো লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি বিভাগ ও পুরনো ক্যাম্সাস ইন্টারনেট সেবায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে হোস্টেলসহ পুরো ক্যাম্পাস ইন্টারনেট সুবিধায় আনা হবে। বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট ডেন এর উন্নয়ন ও তাদের কে সুসজ্জিত করা হয়েছে। যাতে তারা মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়। ইতোমধ্যে তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বন্যার্ত,ও পীড়িত মানুষের সেবা করছে। আনন্দ মোহন কলেজে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক কর্মকর্তাদের আরও ১১৬ টি পদ সৃষ্টির চূড়ান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদন লাভ করেছে। কলেজের দেয়া অধ্যক্ষের বাসভবন টি থাকার অনোপযুক্ত হলেও সংস্কাররের উদ্যোগ নেয়া হয়নি ।
এ বিষয়ে আনন্দ মোহন কলেজের একাধিক ছাত্রছাত্রীরা বলেন কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন আমান উল্লাহ স্যারের জন্য হয়েছে অনেক কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্যার নিজে আরো কয়েকজন স্যারদের নিয়ে এ কাজ গুলো কে আরো গতিশীল করান । ৫ আগস্ট স্যার কোন কিছু কে উপেক্ষা না করে শুধু ছাত্রছাত্রী ভেবে সকলের মাজে একটি সৌহার্দ পূর্ণ সম্পর্ক করেন । স্যারের ভালবাসায় আমরা তিক্ত । এখন কিছু উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রী দের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলন করার পায়তারা করছে একটি মহল যদি এমন টি হয় স্যারের পক্ষে আমারাও নামবো। এছাড়া একাধিক ছাত্রছাত্রী অধ্যক্ষ আমানউল্লাহর পক্ষে ফেসবুৃকে সরব রয়েছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ বলেন, সকলের সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে আনন্দ মোহন কলেজকে যাতে আরও উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে পারি সেই প্রচেষ্টা আমার থাকবে।
0 Comments