স্টাফ রিপোর্টার ঃ
ময়মনসিংহের
ভালুকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন
হিসেবে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব)এবং ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে
বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ভালুকা থানায় একটি হত্যা মামলা, *মামলা নং ২৬, তারিখ:
১৯/১২/২০২৫ খ্রি:*
রুজু হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে
এক সংবাদ সম্মলনে এসব কথা বলেন র্যাব-১৪
এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নয়মুল হাসান। এর আগে, শুক্রবার
(১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে র্যাব এবং
পুলিশ ভালুকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে ও আগুন দিয়ে
দিপু চন্দ্র দাসকে (২৮) হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার
করা হয়েছে। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করায় ফ্যাক্টরির ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর তাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন। পরে বিষয়টি বাইরে ছড়িয়ে পড়লে দিপুকে জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৪
এর অধিনায়ক। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে
হত্যার ঘটনায় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে
ভালুকা মডেল থানায় নিহতের ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার, মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আলমগীর হোসেন (৩৮), মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)। এই সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এদের মধ্যে আলমগীর হোসেন পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড এর ফ্লোর ম্যানেজার এবং মিরাজ হোসেন আকন কোয়ালিটি ইনচার্জ। আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) এবং মো. নাজমুল নামে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক বলেন, ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে শ্রমিকদের সাথে দিপুর কর্মক্ষেত্রের ভেতর বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ফ্যাক্টরির ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর তাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। পরে বিষয়টি বাইরে ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত না করে দিপুকে জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে হত্যার পর গাছের ডালে বেঁধে মরদেহে আগুন দেওয়া হয়।
স্থানীয়
সুত্র অনুযায়ী জানা যায়, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তির
অভিযোগে ভালুকা থানাধীন ১০নং হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার্স নীটওয়্যারস (বিডি) লিঃ ফ্যাক্টরির শ্রমিক ও উত্তেজিত জনতার
দ্বারা গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হন। উত্তেজিত শ্রমিক-জনতা লাশ মহাসড়কে নিয়ে গিয়ে অবরোধ করে এবং লাশে অগ্নি-সংযোগ করে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গফরগাঁও সার্কেলসহ সঙ্গীয় ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করেন এবং থেকে লাশ উদ্ধার করেন, মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
থানায় লাশের সুরতহাল প্রস্তুতপূর্বক ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
পরবর্তীতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মামলার তদন্তকালে সিসিটিভি ফুটেজ, ধারণকৃত ভিডিও ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও ভালুকা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানেভালুকার হবিরবাড়ী এলাকা থেকে ২০/১২/২০২৫ খ্রি: মধ্যরাতে *তিনজনকে গ্রেফতার* করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে স্লোগানের মাধ্যমে উৎসুক জনতাকে উস্কানি দিয়ে মব ভায়োলেন্স সৃষ্টি করে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে এবং লাশ ঝুলিয়ে আগুন দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তারের কথাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তার লাশে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্ধপোড়া লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
.jpeg)

0 Comments