প্রতিদিন চরকা

প্রতিদিন চরকা

ডাক দিবসে ডাকের কথা -ইমতিয়াজ আহমেদ


১৮৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) এর প্রতিষ্ঠার দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ০৯ অক্টোবর সারাবিশ্বে ডাক দিবস পালন করা হয়।  ইউপিইউ ছিল বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বিপ্লবের সূচনা, যা সারা বিশ্বে অন্যদের কাছে চিঠি লেখার ক্ষমতা প্রবর্তন করে। ১৯৬৯ সাল থেকে বিশ্ব ডাক দিবস প্রবর্তন করা হয়।  সেই থেকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডাক পরিষেবার গুরুত্ব তুলে ধরে দিবসটি পালন করে । বাংলাদেশেও আজ সরকারিভাবে ঘটা করে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ডাক বিভাগের বর্তমান চিত্র কি সে বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে হলেও আলোকপাতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করি। 

বর্তমানের ডিজিটালাইজড যোগাযোগ মাধ্যমের পূর্ব পর্যন্ত এদেশে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিত্র ডাক বিভাগ। ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, রাষ্ট্রীয় চিঠিপত্র আদান-প্রদান, পার্সেল, মানি অর্ডার হতো ডাকবিভাগের মাধ্যমে। মানুষ পুরো নির্ভরশীল ছিল ডাকবিভাগের উপর। সময়ের আবর্তে তড়িৎ যোগাযোগ মাধ্যম প্রচলনের ফলে ডাকবিভাগ সাধারণ মানুষের কাছে তার গুরুত্বপূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে সরকারি চিঠিপত্র আদান-প্রদানে এর কার্যক্রম অনেকটা সীমাবদ্ধ। সাধারণ মানুষ তড়িৎ যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ধাবিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যোগাযোগ মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। ফলে ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক চিঠিপত্র ও পার্সেল কুরিযার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। চরমভাবে পিছিয়ে রয়েছে আমাদের ডাক বিভাগ, যা লজ্জাজনক। অথচ ডাক বিভাগের অন্যতম কাজই হলো ডাক ও পার্সেল আদান প্রদান। মানুষ কেন ডাক বিভাগ থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে তা কি আজ পর্যন্ত আমাদের সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা ভেবে দেখেছেন? 

বর্তমানের নিষ্ক্রিয় ডাক বিভাগ একসময় সক্রিয় ছিল বিধায় এর প্রভাব পড়েছিল সাহিত্য সংস্কৃতিতেও। গল্প, নাটক, উপন্যাস, গানে চিঠি, পোস্ট অফিস, পোস্টমাস্টার, ডাকপিয়নের চরিত্র ফুটে উঠতো। গানের কথাই যদি বলি, দেখা যায় ডাকঘরের মাধ্যমে আদান-প্রদানকৃত চিঠি নিয়ে বাংলা সংস্কৃতিতে কালজয়ী গান রচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চিঠি দিও প্রতিদিন চিঠি দিও, চিঠির উত্তর দিস রে বন্ধু মনে যদি লয়, চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে। এমন অসংখ্য কালজয়ী গান আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মুখে মুখে। ডাকপিয়ন ও পোস্টমাস্টার  শিরোনামে রয়েছে ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। যেমন, সুকুমার রায়ের শিশুতোষ ছড়া 'ডাকপিয়ন', রবীন্দ্রনাথের 'ডাকপিয়নের চিঠি' কবিতা ও ছোটগল্প পোস্টমাস্টার, শিহাব শাহীনের উপন্যাস ডাকপিয়নের চিঠি ইত্যাদি।

ডাকবিভাগ আমাদের অতীত, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অংশ বিধায় একে আধুনিকায়ন করে জনমূখী করা উচিত। বিশেষ করে পার্সেল শাখাকে উন্নত করে এর সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এর পরিষেবা স্বচ্ছতার সাথে  মানুষের নিকটে পৌঁছানো উচিত। প্রয়োজনে জনবল নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। এতে বেকার সমস্যা লাঘবে কিছুটা হলেও অবদান রাখা যাবে। বেসরকারী খাতের কুরিয়ার সার্ভিস সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারলে ডাকবিভাগ কেন পারবে না? এই প্রশ্নটি আজ সামনে চলে এসেছে। ডাকবিভাগকে যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে এই প্রশ্নের আশু সমাধান জরুরি বলে মনে করি। 

লেখক পরিচিতি: সভাপতি, সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ, ময়মনসিংহ
 

Post a Comment

0 Comments