বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাগরিক সংগঠন কর্নেল তাহের অধ্যয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগ ময়মনসিংহ নগরীতে জেলা বাসদ কার্যালয়ে '০৭ নভেম্বর ১৯৭৫: একটি বিপ্লবী প্রচেষ্টা' শীর্ষক পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আজ ০৭ নভেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬ ঘটিকায় উক্ত পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইতিহাস গবেষক মো: চাঁন মিয়া ফকির। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইমতিয়াজ আহমেদ তানসেন, মো: নুর আলী চিশতি, তানজিল হোসেন মুণিম, আবিরাত হোসেন, মো: সাব্বির হোসেন প্রমূখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের আকাঙ্খা ছিল পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙ্গে একটি শোষণমুক্ত রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করা। যে রাষ্ট্র কাঠামোতে সকল শ্রেণীর মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব যে রাষ্ট্র কাঠামো ছিল মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সে রাষ্ট্র কাঠামোই থেকে যায়। বিদেশী শাসকের পরিবর্তে দেশীয় শাসক শ্রেণী জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে স্বজাতির ঘাড়ে। গণমানুষ বঞ্চিত হয় তার মৌলিক অধিকার থেকে। এদিকে বাংলাদেশ নামক শিশু রাষ্ট্রটির যাতে বিকাশ না ঘটে সে লক্ষ্যে সক্রিয় হয়ে উঠে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী চক্র এবং তাদের এদেশীয় দোসররা। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হয় শেখ মুজিবুর রহমান। দৃশ্যপটে আবির্ভুত হয় তারই অতি ঘনিষ্ঠ খন্দকার মুশতাক গং। বাংলাদেশ নামক শিশু রাষ্ট্রটির টালমাটাল অবস্থা। এক পর্যায়ে ১৯৭৫ এর ০৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানে, হত্যা পাল্টা হত্যার কারণে দেশের অবস্থা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠে। জাতির এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসেন মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের, বীর উত্তম। অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান, হত্যা পাল্টা হত্যার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে এবং মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের আকাঙ্খা অনুয়ায়ী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙ্গে শোষণমুক্ত রাষ্ট্র কাঠামোর লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৫ এর ০৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে অভ্যুত্থানের নিয়ন্ত্রণ তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে। তিনি ব্যর্থ হন মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের আকাঙ্খা অনুয়ায়ী পুঁজিবাদমুক্ত রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে।
বক্তারা আরো বলেন, কর্নেল তাহের ছিলেন একজন সর্বোচ্চ দেশপ্রেমিক। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ১১ নং সেক্টর গঠন করে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। সম্মূখ যুদ্ধে একটি পা হারান। ০৭ নভেম্বরের অভ্যূত্থানে তিনি ব্যর্থ না হলে দেশ হতো গণমানুষের। কর্নেল তাহেরের মত বীররা সকল প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। সূর্য সেনের মত বিপ্লবীদের আবেদন যেমন ফুরিয়ে যায়নি তেমনি কর্নেল তাহেরের আবেদনও ফুরিয়ে যায়নি। যুগে যুগে পৃথিবীতে বিপ্লবীরা জন্ম নেন স্বজাতিকে জাগিয়ে তুলতে। মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকেন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে। কর্নেল তাহের তেমনিই একজন বিপ্লবী!
0 Comments